বিনোদন ডেস্ক : হৃদয়স্পর্শী ও মনমাতানো গান পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হলো উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় লোকসংগীতের আসর ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট-২০১৭’র প্রথম রাত। ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামে তিনদিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সান কমিউনিকেশনস।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় ফোক ফেস্টের মূল আয়োজন। তবে দর্শকদের আগমন ঘটতে থাকে বিকেল থেকেই। সূর্যের আলো যতই কমতে থাকে ততই বাড়তে থাকে আগত দর্শক শ্রোতাদের জোয়ার। বিকাল ঘনিয়ে যখন সন্ধ্যা তখনও স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথে দীর্ঘ লাইন। সেখানে অপেক্ষমাণ তরুণ-তরুণী, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব সবার ভিতরেই ছিল মাটি ও মানুষের প্রাণের গান লোকসংগীত নিয়ে উৎসবের আমেজ। নিরাপত্তা বেষ্টিত পুরো স্টেডিয়াম ছিল আলোক সজ্জিত।
এসময় আগত দর্শকরা বলেন, ‘অনুষ্ঠানের প্রথম দিন আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। শহুরে জীবন থেকে কিছু সময় আমরা মাটির টানে ফিরে যেতে চাই’। এসময় তারা প্রতিনিয়ত লোক সঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেয়ার এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের আবেদন জানান।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মঞ্চে ওঠেন ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র শিল্পীরা। লালনের ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন তারা। পরে তারা শোনান মরমি গানের কিংবদন্তী শিল্পী হাসান রাজার ‘বাউলা কে বানাইল রে’ গানটি।
এরপর মঞ্চে ওঠেন বাউল ও সুফি গানের সাধক শিল্পী শাহাবুদ্দীন ও তার দল। এসময় করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান উপস্থিত হাজার হাজার শ্রোতা। ফকির শাহাবুদ্দীন ‘ওহে দীন বন্ধু দয়া করো আমারে’, ‘তুই যদি হইতি গলার মালা’, ‘গ্রামের নওজোয়ান’সহ টানা পাঁচটি গান পরিবেশন করেন।
এরপর মঞ্চে আসেন ব্রাজিলিয়ান ফোক তারকা মোরিসিও তিজুমবা ও তার দল সেক্সটেট। ঐতিহ্যবাহী সাম্বার আলোকে তিজুমবার মনোমুগ্ধকর সুরে বিমোহিত হয়ে পড়েন উপস্থিত দর্শকরা। তিনি নিজ ভাষায় গান পরিবেশন করলেও সুরের ছন্দে নেচে গেয়ে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। গান শেষে ব্রাজিলিয়ান ফোক তারকা মোরিসিও তিজুমবা আবারও বাংলাদেশে আসার ইচ্ছার কথা জানান।
মাঝে উদ্বোধনীর পর্ব শেষে মঞ্চে ওঠেন তিব্বতের পাহাড়ি সন্তান বিখ্যাত লোক শিল্পী তেনজিল চোয়েগাল। তার সুরের ঢেউয়ে যেন তিব্বতের পাহাড়, ঝরনা ও বরফের আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম। দর্শকশ্রোতারা নিশ্চুপ পাহাড়-পর্বত ও হিমালয় দর্শন করার মতোই উপভোগ করছিলেন চোয়েগালের কণ্ঠে পাহাড়ি মানুষের প্রেম অনুরাগ ও জীবন সংগ্রামের গান।
তেনজিন চোয়েগালের গান পরিবেশনের কিছুক্ষণ পরই যেন শেষ হয় হাজারো দর্শকের অপেক্ষার পালা। পরবর্তী শিল্পীর নাম শুনেই তারা ভেঙে পড়েন বাঁধ ভাঙা উল্লাসে। স্টেডিয়ামের সব দর্শকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় পাপন.., পাপন… নাম। দর্শকদের ডাক শুনেই যেন হাজির হন ভারতের বিখ্যাত লোক গানের তারকা আসামী শিল্পী পাপন।
এরপরই শুরু হয় তার মনমাতানো বাংলা, হিন্দি, পাঞ্জাবি ও রাজস্থানের সুরের মাতম। তার সুরে মেতে ওঠে পুরো গ্যালারি। ‘ফোক ফেস্ট-২০১৭’র প্রথম দিনের আসর পাপনের পরিবেশনের মাধ্যমেই শেষ হয় অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এ উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইরান, ব্রাজিল, মালি, ফ্রান্স, জাপানের প্রায় ১৪০ জন ফোক সংগীতশিল্পী। সঙ্গে থাকছে বাদ্যযন্ত্রের ধুন আর নৃত্য পরিবেশন।
প্রথম দিনের মতো ১০ ও ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত চলবে এ অনুষ্ঠান।